অভিনন্দন আমার ওয়েবসাইট এ ভিজিট করার জন্য ধন্যবাদ ভালো থাকবেন কস্টের গল্প ! সত্য কাহিনী অবলম্বনে

কস্টের গল্প ! সত্য কাহিনী অবলম্বনে

 আমার স্ত্রীকে সেদিন খুব মারার পর আর তেমন একটা কথা বলে না।  বেশিরভাগ সময় চুপচাপ থাকে । সংসারের কাজকর্ম চুকিয়ে চুপচাপ বসে কাঁথা সেলাই করে। আগের মত আর ফোন চাপে না, গুন গুন সুরে গান করে না। 


পাড়ার কোনো মহিলার সাথেও সেভাবে কথা বলে না।যখন হাতে একেবারেই কোনো কাজ থাকে না তখন পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে। 


আমার বেশ ভালই লাগে। সারাক্ষণ হাসি আর বক বক করে মাথা খেত। এতটা বাচাল হওয়া কোনো বিবাহিত মেয়েরই ঠিক নয়। তাই ভাবলাম শুরুতেই ডগা ছেঁটে দেই। 

তাই সেদিন দিলাম কয়েক ঘা বসিয়ে। সেদিন অর্পি শুধু নির্বাক হয়ে তাকিয়ে ছিল।  তার চোখের জল টলমল করে উপছে পড়তে চায়। আমি হাত উঁচু করে বলেছিলাম যদি সে কাঁদে তবে তাকে খুন করে ফেলব। 

সেইযে চুপ ভয়ে এখন সে কাঁদতেও ভুলে গিয়েছে। 


বেশ খেয়াল করে দেখছি যে তার ফোনে কোনো কলও আসে না৷ একটা আশংকা নিয়ে অর্পির ফোন নিয়ে দেখি ফোনটা খোলাই আছে।  আমি অবাক হলাম এই ভেবে ফোন খোলা অথচ কেউ ফোন করে না। 

অবশ্য ফোন করবে কে, বাবার বাড়ি থেকেই কোনো খোঁজ নেয় না তার আবার অন্য লোক! বিয়ের সময় বাবার বাড়ি থেকে যা যা দেবার কথা ছিলো করনার জন্য তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না বলে দিতে পারেনি বলেই যোগাযোগ করে না তারা।

কয়েকজন বান্ধবীর সাথে দেখতাম নিয়মিত কথা বলত। 


 এখন তাও বলছে না।  কল লিস্ট এবং সেভ করা নম্বর চেক করে দেখি সেখানে শুধু আমার আর আমার আত্মীয়-স্বজনের নম্বর।  ব্যাপারটা বেশ ভালই লাগল। বিয়ের পর মেয়েদের নিজের বাপের বাড়ির সাথে অত কথা কিসের? বেশ তৃপ্তি নিয়ে সেদিন ঘুমাতে গেলাম।

ঘুমের ঘোরে বিছানাটা ফাঁকা মনে হলো। হুট করেই জেগে দেখি পাশে অর্পি নেই। মুহুর্তেই ঘুম উধাও।

বিছানা ছেড়ে উঠে গেলাম। 


ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত তিনটার কাঁটা ছুঁয়ে গেছে।  

ঘর ছেড়ে বারান্দায় এলাম সেখানেও অর্পি নেই। পাশের কামরায় উঁকি দিয়ে দেখি জানালা দিয়ে সে আকাশ দেখছে। ঠিক বুঝতে পারলাম না ঘোরতর অমাবস্যার রাতে আকাশে দেখার কি থাকে?  ওর পিছনে দাঁড়িয়ে আমি নিজেও আকাশ পানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলাম। অজস্র তারায় আকাশটা কেমন সেজে উঠেছে।  তারার অস্পষ্ট আলোতেও প্রকৃতি সত্যিই মোহনীয় সাজের দ্যূতি ছড়াচ্ছে। যারা এই আকাশ দেখেনি তারা বুঝবে না এর কি দুর্নিবার আকর্ষণ। অর্পি আকাশ দেখায় এতটাই মগ্ন যে আমার উপস্থিতি তার অনুভবেই আসেনি। কিছু না বলে পিছনের পা পিছনে রেখেই শোবার ঘরে ফিরে আসি। ঘরে এসে কিছুতেই মন টিকছে না। মেয়েটার উপর হয়তো অবিচার করা হচ্ছে। 


খুব মন খারাপ করে থাকে আজকাল।  যা বলি শুধু তারই উত্তর দেয়। যা বাজার করি তাই রান্না করে। বিগত ছয় ছয়টি মাস ধরে সে মুখ ফুঁটে কিছুই খেতে চায়নি। কেমন যেন বোবা হয়ে গিয়েছে।  আদরেও নির্লিপ্ত থাকে শাসনেও তাই।  কেমন যেন জড় পদার্থের মত হয়ে গিয়েছে। খাঁচায় ভরা পাখির মত মাঝে মাঝে ছটফট করে সে। তবে কি অর্পি মুক্তি চায়? মনটা খুব করে খারাপ হয়ে গেল কারণ বিয়ের সময় আমি আর্থিক কিছু না পেলেও বলতেই হয় যে একটা খুব সাংসারিক বৌ পেয়েছি,আর মেয়েটা অসম্ভব লক্ষি ধরনের একটা মেয়ে । 


সারাদিন শেষে ও তো শুধু বান্ধবীর সাথেই কথা বলতো।বাস্তবিক পক্ষে অর্পি খুব ভালো মানুষ।  খুব ভালো মনের সে। তবে ওকে হারাবার কিসের ভয় আমার?  তবে কি আমি সন্দেহ বাতিক গ্রস্থ?  না, আর দেরি করা চলবে না। আগামীকালই আমি একজন সাইক্রিয়েটিস্ট এর কাছ থেকে পরামর্শ নেব। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কখনযে ঘুমিয়ে গিয়েছি জানি না। 

সকালে সবার চেচামেচিতে ঘুম ভেঙে বাইরে এসে দেখি ঘরের পূর্বদিকের খালপাড়ের কাত হয়ে পড়া জির গাছটির মোটা ডালে অর্পি কালো দঁড়ি গলায় দিয়ে ঝুলছে।


#একটি_সত্যি_কাহিনী_অবলম্বনে


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন