সময়টা ২০০১ সালের আষাঢ় কিংবা শ্রাবণ
মাস হবে!
আকাশটা ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে
ক্ষনে ক্ষনে বিদুৎ চমকাচ্ছে
মনে হচ্ছে বড়ো ধরনের কোনো ঝড়ো হাওয়ার
সংকেত দিচ্ছে,
বিকেল গড়িয়ে সন্ধা হচ্ছে আমি দরজা
জানালা সব লাগিয়ে দিয়ে শুয়ে শুয়ে হুমায়ুন
আহমেদের একটা বই পড়ছিলাম,
এমন সময় শুরু হলো কালবৈশাখী ঝড় আমার খুব
ভয় লাগতে লাগলো কারণ আব্বু আম্মু দুজনেই
আমার খালার বাড়িতে গেছে,
যাবার সময় বলে গেছেন আজ আসবেনা!
আমি যেনো ঘরের সব দরজা জানালা
লাগিয়ে শুয়ে পড়ি,
তুমুল বেগে তুফান শুরু হয়েছে বিদুৎও চলে
গেছে এখন মনে হচ্ছে আমি কোনো অন্ধকার
পুড়িতে চলে আসছি,
মাগরিবের আজান দিয়েছে মাত্র তার পরেও
মনে হচ্ছে অনেক রাত হয়েছে,
ঝড় হচ্ছে তো হচ্ছেই থামার কোনো নামও
নেই, এমন সময় বাইরের গেইটে কারো
ধাক্কানোর আওয়াজ পেলাম, আমি বল্লাম
কে ওখানে, কিন্ত কোনো কথা বলছে না এক
নাগাড়ে গেইট ধাক্কায়েই চলছে,
বাধ্য হয়ে ছাতাটা নিয়ে বের হলাম কে
এসেছে দেখার জন্য,
আমি যেই গেইট টা খুলেছি তখনই এক মাঝ
বয়সী লোক আমার সামনে দিয়েই হুর হুর করে
বাড়ির ভিতর ঢুকতে লাগলো,
আমি পিছন থেকে এক নাগাড়ে বলেই যাচ্ছি
এই কে আপনি আর এভাবে ঝড়বৃষ্টির রাতে
হুরমুড় করে বাড়ির ভিতর ঢুকছেন কেনো,
এতক্ষণে লোকটা আমার দিকে ফিরে
তাকালো,
আর ফিরে তাকানোর সাথে সাথেই আমি
চমকে উঠলাম,
লোকটার উচ্চতা অনেক বেশি মুখটা কেমন
যেনো ফ্যাকাসে ফ্যাকাসে লাগছে মাথার
চুল গুলো উসকো খুসকো,
একেবারে পাগলের মতো লাগছে,
এবার আমি কাছে যেতেই লোকটা বলতে
লাগলো, বাবা আমার বাড়ি অনেক দূরে আমি
এক আত্মীয় বাড়ি থেকে ফিরছিলাম
পথিমধ্যে ঝড় শুরু হলো আশেপাশে কোনো
বাড়ি ঘর না পেয়ে তোমার এখানে এলাম
রাতটুকু যদি আশ্রয় দিতে তাহলে খুব উপকার
হতো,
লোকটার ইনিয়ে বিনিয়ে বলা দেখে আমি
আর না করতে পারলাম না,
এদিকে আব্বা আম্মাও বাড়িতে নেই একটু ভয়
ভয়ও লাগছে সবকিছুই ভাবছি,
এমন সময় ঘোর কাটলো লোকটার ডাকে কি
বাবাজী আমাকে একটু আশ্রয় দিবে তো?
তখন আমি বললাম হে নিশ্চয় আসুন আমার
সাথে,
লোকটা আমার পিছু পিছু আসতে লাগলো,
এতক্ষণে আমি একটা জিনিষ খেয়াল করলাম
লোকটা এখানে আসার পর থেকেই তীব্র
একটা পচা গন্ধ নাকে আসতেছে এতক্ষণ
হয়তো কথা বার্তা বলার কারনে খেয়াল
করিনি,
বাড়ির ভিতর গিয়ে বললাম আপনি বসুন আমি
আপনার খাবারের ব্যবস্হা করছি, লোকটা
বললো না না আমার জন্য খাবার আনতে
হবেনা আমি রাতে কিছুই খাবোনা, আমি
অনেক বার বলার পড়েও ওনি কিছুই খেলেন
না,
ওনাকে গেষ্ট রুমে বিছানা করে দিলাম
বললাম ঘুমিয়ে পড়ুন,
ওনি বললো না না আনি এখানে থাকবো না
আমাকে আপনাদের রান্না ঘরে থাকতে
দিলেই হবে, আমি বললাম সেকি এখানে তো
একটা রুম ফাকাই আছে তাহলে আপনি রান্না
ঘরে ঘুমাবেন কেনো,
আর রান্না ঘরে ঘুমালে আপনি ভয়ও পেতে
পারেন কারন রান্না ঘরটা একেবারে বাড়ির
পিছনের জংগল ঘেষে,
লোকটার সেই এক কথা না বাবা আমি রান্না
ঘরেই থাকবো
কি আর করা আমি বললাম চলুন আপনাকে
রান্না ঘরটা দেখিয়ে দিয়ে আসি,
বলেই লোকটাকে নিয়ে রান্না ঘরের কাছে
আসলাম ঘরটা খুলে দিয়ে তাকে একটা কাথা
আর একটা বালিশ দিয়ে বললাম নিন শুয়ে
পড়ুন,
আমারও ভালোই হলো কারণ লোকটার
শরীরের যে গন্ধ সইতে পারছিলাম না,
তার পরেও ভাবলাম লোকটা হয়তো লজ্জা
পেয়েই এখানে ঘুমাতে আসলো,
ওনাকে ঘুমাতে দিয়ে আমি ঘরে এসে শুয়ে
পরলাম ঝড়টা এখনও কমার কোনো নাম নেই
বাড়িটা একেবারে অন্ধকার জগতের মতো
লাগছে,
আমি মোবাইলের টচলাইট জালিয়ে বিছানা
ঠিক করে শুয়ে পরলাম,
রাত ঠিক কতো হবে জানিনা হঠাৎ আমার
কানে গরুর চিৎকার আসতে লাগলো
আমি তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে
মোবাইল টা হাতে নিয়ে গরুর গোয়ালের
দিকে যেতে লাগলাম,
রান্না ঘরটার পাশেই গরুর গোয়াল, আমি
ভাবলাম নিশ্চয় চোর এসেছে জানে আজ
বাড়িতে কেউ নাই সুযোগ বুঝে চুরি করতে
এসেছে,
আমি ভয়ে ভয়ে গোয়াল ঘরটার দিকে এগিয়ে
যাচ্ছি আমার বুকের ভিতর টা ধুক ধুক করছে
হঠাৎ চোখ পরলো রান্না ঘরটার দিকে দেখি
রান্না ঘরের দরজাটা খোলা,
আমার মনে ভয়টা আরো বারতে লাগলো
রান্না ঘরে উকি দিয়ে যা দেখলাম তা
দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না,
আমি দেখলাম বিছানাটা খালি পরে আছে
লোকটা নেই,
ভাবলাম এই লোকটাই হয়তো গরু চোর আমি
তাড়াতাড়ি গোয়াল ঘরের দিকে যেতে
লাগলাম,
গোয়াল ঘরের যতোই কাছে যাচ্ছি গরুর
চিৎকার ততই জোরে পাচ্ছি,
আস্তে আস্তে গোয়াল ঘরের কাছে গিয়ে
দরজার ফাঁক দিয়ে যা দেখলাম তা কেউ
কোনো দিন সপ্নেও দেখতে চাইবে না,
আমি দেখলাম সেই লোকটা আর আগের মতো
নেই,তার শরীরটা বিকট আকার ধারণ করেছ
দাঁত গুলো অনেক বড়ো বড়ো হয়ছে হাতের নখ
গুলো কাচির মতো সুচালো হয়েছ আর সেই নখ
গুলো দিয়েই গরুর ঘারের উপর চাপ দিয়ে ধরে
আছে আর তার ধারালো দাত গুলো গরুর গলায়
বসিয়ে দিয়েছে আর গরুটা সজোরে চিৎকার
করছে,
আমি এই দৃশ্য দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি আমি
কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা আমার
শরীরটা অনেক ভারী হয়ে গেছে গা বেয়ে
দরদর করে ঘাম ঝরছে আমি এক পা সামনেও
যেতে পারছিনা পিছনেও যেতে পারছিনা,
আমি দোয়া দরুদ পরতে চেষ্টা করছি কিন্ত
মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের করতে পারছিনা,
কোনোরকমে একটা চিৎকার দিলাম,
চিৎকার দেওয়ার সাথে সাথেই লোকটা
আমার দিকে ফিরে তাকালো তার চোখ
গুলো দিয়ে যেনো আগুন বের হচ্ছে দাত গুলো
দিয়ে টপাটপ করে তাজা রক্ত পরছে,
আমার দিকে ভয়ংকর দৃষ্টি নিয়ে আসতে
লাগলো এই দৃশ্য দেখে আমি ওখানেই
সেন্সলেস হয়ে যাই,
আমার যখন জ্ঞান ফিরে আমি দেখলাম
আব্বা আম্মা আমার পাশে বসে আছে আর
সাথে কবিরাজ চাচাও,
আমি বললাম তোমরা কখন এলে তখন আমার
আম্মা বল্লো পাশের বাড়ির আবদুল চাচা
বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলো তোর
চিৎকার শোনে আমাদেরকে বাড়িতে যায়
আর গিয়ে দেখে তুই অজ্ঞান অবস্থায় পরে
আছোস আর গোয়ালের গরুটা ক্ষত বিক্ষত
অবস্থায় পরে আছে,
তখন আব্দুল চাচা আমাদের খবর দেয়,
কবিরাজ চাচা আমার কাছে জানতে চাইলো
কি হয়েছিলো আমি তার কাছে সব ঘটনা
খুলে বল্লাম,
সব শোনার পর কবিরাজ চাচা বল্লো ওটা
একটা পিশাচ ছিলো, সুযোগ বুঝে বাড়িতে
এসেছিলো ভাগ্য ভালো আব্দুল চাচা তোমার
চিৎকার শোনেছিলো,
তা না হলে তোমাকে আর জীবিত পাওয়া
যেতোনা হয়তো গরুটার মতো তোমার দেহটাও
ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় মাটিতে পরে থাকতো!!
বন্ধুরা এই ছিলো ঘটনা ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার
দৃষ্টিতে দেখবেন!!
